প্রতিসমতা, নবম দশম শ্রেনী, জাকির রুবেল
প্রতিসমতা ও এর প্রকারভেদ
নবম-দশম-গণিত_________________________
প্রতিসমতা
প্রতিসমতা হলো কোনো বস্তুকে প্রতিফলন, ঘূর্ণন, আরোহী পদ্ধতি ইত্যাদি বিবিধ রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বস্তুটির একই (অপরিবর্তিত) আকার ও আকৃতি দেখানো। এটি একটি প্রয়োজনীয় জ্যামিতিক ধারণা। এটি প্রকৃতিতেও বিদ্যমান এবং আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কর্মকান্ডেও এটি রয়েছে। গাছের পাতা, ফুল, মৌচাক, ঘরবাড়ি, টেবিল, চেয়ার সবকিছুর মধ্যে প্রতিসমতা বিদ্যমান। নিচের চিত্রগুলো ভাল করে লক্ষ করলে প্রতিসমতার ধারনা পাওয়া যাবে।
চিত্রগুলোতে প্রতিসমতা বিদ্যমান। চিত্রগুলোকে সরলরেখা বরাবর ভাঁজ করলে তার অংশ দু’টি পুরোপুরি মিলে যাবে। আবার শেষের দু’টি চিত্রকে নির্দিষ্ট বিন্দুর সাপেক্ষে ঘুরালে এর বিভিন্ন অংশের অবস্থানের পরিবর্তন হয় এবং এক পর্যায়ে নতুন অবস্থানে চিত্রগুলো তার আদি অবস্থানের ন্যায় একই হয়।
সুষম বহুভূজের প্রতিসাম্য রেখা
যে বহুভূজের রেখাংশগুলোর দৈর্ঘ্য ও কোণগুলো সমান তাকে সুষম বহুভূজ বলে। সমবাহু ত্রিভূজের বাহু ও কোণগুলো সমান। আবর বর্গক্ষেত্রের বাহু ও কোণগুলো সমান। তাই সমবাহু ত্রিভূজ হলো তিন বাহুবিশিষ্ট এবং বর্গক্ষেত্র হলো চার বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভূজ। অনুরূপভাবে সুষম পঞ্চভূজ ও সুষম ষড়ভূজের বাহু ও কোণগুলো সমান। প্রত্যেক সুষম বহুভূজ একটি প্রতিসম চিত্র।
রেখা প্রতিসমতা বা প্রতিফলন প্রতিসমতা
যদি কোনো চিত্র একটি রেখার উপর এমন দুইটি ভাগে বিভক্ত হয় যেন মনে হয় চিত্রটির অর্ধাংশ প্রতিফলিত হয়ে অপর অর্ধাংশ গঠিত হয়েছে তাহলে উক্ত প্রতিসমতাকে রেখা প্রতিসমতা বা প্রতিফলন প্রতিসমতা বলে।
প্রতিসাম্য রেখা
যে রেখাটির উপর চিত্রটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতিফলন প্রতিসমতা সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় প্রতিসাম্য রেখা। এ ধরনের প্রতিসমতার ধারণার সাথে আয়নার প্রতিফলনের সম্পর্ক রয়েছে। কোনো জ্যামিতিক চিত্রের প্রতিসাম্য রেখা তখনই থাকে যখন তার অর্ধাংশের প্রতিচ্ছবি বাকি অর্ধাংশের সাথে মিলে যায়। এজন্য প্রতিসাম্য রেখা নির্ণয়ে কাল্পনিক আয়নার অবস্থান রেখার সাহায্য নেওয়া হয়।
লক্ষ করা যাচ্ছে, নিচের জ্যামিতিক চিত্রগুলোতে (সুষম বহুভূজগুলোতে) একাধিক প্রতিসাম্য রেখা রয়েছে।
কোন সুষম বহুভূজের কয়টি প্রতিসাম্য রেখা রয়েছে চিত্রে সেটাই দেখানো হয়েছে। সমবাহু ত্রিভূজের-তিনটি, বর্গক্ষেত্রের-চারটি, পঞ্চভূজের-পাঁচটি এবং ষড়ভূজের-ছয়টি প্রতিসাম্য রেখা রয়েছে।
ঘূর্ণন প্রতিসমতা
যদি কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুর সাপেক্ষে ঘূর্ণনের ফলে কোনো বস্তুর বিভিন্ন অংশের অবস্থানের পরিবর্তন হয় এবং কোন একটি অবস্থানে এসে বস্তুটির আকার ও আকৃতি তার আদি অবস্থানের ন্যায় একই হয় তবে তাকে ঘূর্ণন প্রতিসমতা বলা হয় বা আমরা বলি বস্তুটির ঘূর্ণন প্রতিসমতা রয়েছে। যেমন:
ফ্যানের পাখা, সাইকেলের চাকা, বর্গ ইত্যাদির ঘূর্ণন প্রতিসমতা রয়েছে। ফ্যানের পাখা ঘূর্ণনের সময় একাধিক বার মূল অবস্থানের সাথে মিলে যায়।
ফ্যানের পাখাগুলোর ঘূর্ণনের ফলে পাখাগুলোর অবস্থানের পরিবর্তন হয় এবং ফ্যানটি তার আদি অবস্থানের আকার ও আকৃতি ফিরে পায়। ফ্যানটি একটি পূর্ণ ঘূর্ণনে চারবার তার আদি অবস্থানের আকার ও আকৃতি ফিরে পায় ( অবস্থানে)। একটি পূর্ণ ঘূর্ণনের ফলে ফ্যানটি তার আদি অবস্থানে চলে আসে। এজন্য ফ্যানের ঘূর্ণন প্রতিসমতার মাত্রা 4 । একটি বর্গের ঘূর্ণন প্রতিসমতার মাত্রাও 4 । কারণ বর্গও প্রতিবার ঘূর্ণনের ফলে তার আদি অবস্থানের আকার ও আকৃতি লাভ করে। উল্লেখ্য, একটি পূর্ণ ঘূর্ণনের কোণের পরিমান ।
যেকোনো চিত্র একবার পূর্ণ ঘূর্ণনের ফলে তার আদি অবস্থানে ফিরে আসে। তাই যেকোনো জ্যামিতিক চিত্রের 1 মাত্রার ঘূর্ণন প্রতিসমতা রয়েছে। ঘূর্ণন প্রতিসমতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে তা হলো:
১। ঘূর্ণন কেন্দ্র, ২। ঘুর্ণন কোণ, ৩। ঘূর্ণনের দিক এবং ৪। ঘূর্ণনের মাত্রা।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণন ঘড়ির কাঁটার দিকে হতে পারে অথবা বিপরীত দিকেও হতে পারে। ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘূর্ণনকে ধনাত্মক দিক হিসেবে ধরা হয়।
একই চিত্রে রেখা প্রতিসমতা ও ঘূর্ণন প্রতিসমতা
কিছু জ্যামিতিক চিত্রের একই সাথে রেখা প্রতিসমতা ও ঘূর্ণন প্রতিসমতা উভয়টি-ই রয়েছে। যেমন: বর্গের 4 টি প্রতিসাম্য রেখা রয়েছে আবার 4 মাত্রার ঘূর্ণন প্রতিসমতাও রয়েছে। তবে সকল জ্যামিতিক চিত্রের-ই উভয় ধরনের প্রতিসমতা থাকবে এমনটি নয়।
বৃত্তের প্রতিসমতা
বৃত্ত একটি আদর্শ প্রতিসম চিত্র। বৃত্তকে তার কেন্দ্রের সাপেক্ষে যেকোনো কোণে বা যেকোনো দিকে ঘুরালে এর অবস্থানের পরিবর্তন বুঝা যায় না। অতএব, বৃত্তের ঘূর্ণন প্রতিসমতা অসীম। বৃত্তের কেন্দ্রগামী যেকোনো রেখা এর প্রতিসাম্য রেখা। তাই বৃত্তের অসংখ্য প্রতিসাম্য রেখা রয়েছে।
জাকির হোসেন
শিক্ষক,
হলি ক্রিসেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ।
শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক,ফেনী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন